বসন্তে মানুষের ভেতরে রোমান্টিকতার প্রবণতা আর দশটা ঋতুর চেয়ে বেশি। এর কারণ কী? মানুষের প্রতি মানুষের আকর্ষণের পেছনে আবহাওয়ার ভূমিকা কতটুকু?

বসন্তের আগমনে কী হয়, তা বিতং করে বলার সময় বাউল শাহ আবদুল করিমের ওই গানটাই জুতসই মনে হয়। কোন গান? ‘বসন্ত বাতাসে’। গানের কিছু পঙ্‌ক্তি মনে করে দেখুন, ‘…বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/আমার বাড়ি আসে, সই গো…’। রুক্ষ শীত শেষে বসন্তে ফুল ফোটে। সেই ‘ফুলের গন্ধে মন আনন্দে/ভ্রমরা আকুল, সই গো…’। তারপর ‘সেথায় বসে বাজায় বাঁশি/মন নিল তার সুরে, সই গো…/মন নিল তার বাঁশির গানে/রূপে নিল আঁখি…’। হ্যাঁ, এটাই ছিল বলার। বসন্তে মানুষের ভেতরে রোমান্টিকতার প্রবণতা আর দশটা ঋতুর চেয়ে বেশি। এর কারণ কী? উত্তর খুঁজেছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের সহকারী প্রযুক্তি সম্পাদক লিসা বোনোস। মানুষের প্রতি মানুষের আকর্ষণের পেছনে আবহাওয়ার ভূমিকা বিষয়ে তিনি কথা বলেন ম্যাচ ডটকম নামের ডেটিং সাইটের চিফ সায়েন্স অ্যাডভাইজার হেলেন ফিশারের সঙ্গে। তাতে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। চলুন জেনে নিই—

মেলাটোনিন হরমোন হ্রাস পাওয়া

মার্কিন জৈবিক নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশারের ভালোবাসা ও রোমান্টিকতা নিয়ে ছয়টি বেস্টসেলিং বই আছে। তিনি বলেন, মানবদেহের পিনিয়াল গ্রন্থি, যেখানে মেলাটোনিন হরমোন তৈরি হয়, শীতকালে থাকে জাগ্রত এবং মানুষের মধ্যে ঘুম ঘুম ভাব তৈরি করে। সেই সঙ্গে রোমান্টিকতাকে রাখে দমিয়ে। হেলেন ফিশার বলেন, ‘বসন্তে আলো আমাদের চোখের রেটিনায় আঘাত করে এবং সরাসরি পিনিয়াল গ্রন্থিতে চলে যায়। ফলে মেলাটোনিনের সক্রিয়তা হ্রাস পায়। আর এতে আমাদের চালচলনে আসে পরিবর্তন। নিজেদের ভেতরে একধরনের চপলতা ও উচ্ছ্বাসের অনুভূতি তৈরি হয়। মেলাটোনিন কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে শুরু করে। তখন সঙ্গীকে আরও আকর্ষণীয় ভাবতে শুরু করে সবাই।’

আরো পড়ুনঃ হত্যা করা হয়েছিল নায়ক মান্নাকে!

নতুনত্ব

ঝলমলে রূপ, শব্দ ও ঘ্রাণের মাধ্যমেও বসন্ত মানুষের মধ্যে অধীরতা তৈরি করে বলে উল্লেখ করেছেন ফিশার। প্রেম বিষয়টি মানবদেহের ডোপামিন সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত, যা আমাদের নতুনত্বের দিকে ধাবিত করে। ডোপামিন হচ্ছে একধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যেটি আমাদের মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে। ‘নতুনত্ব ডোপামিন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং সম্ভবত এটাই আমাদের প্রেমের দিকে ঠেলে দেয়,’ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন ফিশার।

ফুলের প্রভাব

বসন্তে ফুল ফুটলে ভ্রমর, প্রজাপতির মতো পতঙ্গসহ পাখিও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরা ছুটে চলে গাছের ডালে ডালে। এক ফুলের পরাগরেণু এদের দেহের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অন্য ফুলে, অর্থাৎ উদ্ভিদের প্রজননপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। আর এরা ফুলের প্রতি আকৃষ্ট হয় মূলত ঘ্রাণের কারণে। রঙও প্রভাব ফেলে। উদ্ভিদের এই প্রজননপ্রক্রিয়ায় মানুষ অংশ না নিলেও ফুলের ঘ্রাণে–রঙে ঠিকই মাতোয়ারা হয়। মনটা চনমনে হয়ে ওঠে। তাই বসন্তে ফুলের ঘ্রাণও আমাদের আরও রোমান্টিক করে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে।

Social Share This Story, Choose Your Platform!