তিন তরুণের ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন ভূমধ্যসাগরেই শেষ। অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া উপকূলের ভূমধ্যসাগরে ডুবে মাদারীপুরের তিন তরুণ মারা গেছেন। তাদের এমন অকাল মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আপন শেখ নামে এক তরুণ।

নিহতরা হলেন সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম পাঁচখোলা গ্রামের আলী আকাব্বরের ছেলে সম্রাট (২৫), রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২১) ও সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২৫)। এ ছাড়া এ ঘটনায় নিখোঁজ আপন শেখ গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের পান্নু শেখের ছেলে

শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই তিন তরুণের মৃত্যুর খবর আসার পর এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, এমনিতেই আপনজনদের হারিয়ে শোকে দিশাহারা পরিবার। এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পাঁচখোলা গ্রামের আলি আক্কাবরের ছেলে মো. সম্রাট ভাগ্যের চাকা ঘোড়াতে যাত্রা করেছিল ইতালির পথে। মাস পাঁচেক আগে রাসেদ খান নামে এক দালালের সঙ্গে চুক্তি হয় ইতালি পৌঁছে দেওয়ার। এ সময় দালাল সম্রাটের পরিবারের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেয় তাকে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। এরপর তাকে লিবিয়ার একটি বন্দী শিবিরে আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। এরমধ্যে হঠাৎ করেই খবর নৌকাডুবির।

সম্রাটের ভাই আজগর বলেন, কতগুলো টাকা খরচ করে ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছি। এখন আমার ভাই নাই। সে মারা গেছে। এখন টাকাও গেল ভাইয়ের জীবনও গেল।

আরো পড়ুনঃ রহস্যময় স্পিনারে মুগ্ধ মঈন আলি।

জানা গেছে, দালাল রাসেদ খান ও তার ভাই টুলু মাদারীপুরের বিভিন্ন সহজ সরল মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করতো। তার বিরুদ্ধে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে একাধিক মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি মামুন শেখ ও সজল বৈরাগীসহ বেশ কয়েকজন তরুণ ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে গত বুধবার লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পারি দিতে রওনা হন তারা । ৩২ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকায় ৫২ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ বেশ কয়েকজন মারা যান। পরে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।

নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজিব শেখ জানান, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয় ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালি পাঠালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুনঃপূবালী ব্যাংকে বড় নিয়োগ, পদ ৫৪০

এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত দালাল মোশারফ কাজী দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়া বসবাস করছে। তার ছেলে যুবরাজ গ্রাম থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য যুবকদের সংগ্রহ করত বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মাদারীপুরের রাজৈর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার আসাদ ও সদর থানার ওসি এএইচএম সালাউদ্দিন জানান, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Social Share This Story, Choose Your Platform!